পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে পুলিশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মতে, কমিশনের সুপারিশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত রয়েছে, বিশেষ করে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবনা না থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও পেশাদারভাবে পরিচালনার জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। তবে সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট রূপরেখা দেয়নি। তারা জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে আরও বিচার-বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।
এছাড়া, অপরাধ তদন্তের জন্য স্বতন্ত্র অভিযোগ কমিশন গঠনের সুপারিশ না থাকা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না হওয়া নিয়েও পুলিশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
আগামীকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসবেন। এতে দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সদর দপ্তরের তিনজন ডিআইজি, সব অতিরিক্ত আইজিপি এবং আইজিপি উপস্থিত থাকবেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকে পুলিশের কর্মকর্তারা তাঁদের সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি, সংস্কার কমিশনের ‘দুর্বল’ প্রতিবেদন এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকার প্রসঙ্গ প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করবেন।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন নীতিগতভাবে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে।’ তবে এটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে নাকি সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় থাকবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া সুপারিশ অনুসারে, তারা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন দেখতে চেয়েছিল, যেখানে ১১ জন সদস্য থাকবেন। তাদের মধ্যে একজন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন। এছাড়া, সংসদীয় প্রতিনিধি, আইনজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই কমিশনে অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,
"পুলিশ সংস্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন। কিন্তু সংস্কার কমিশন এই বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছে, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।"
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়, যেখানে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনার কথা বলা হলেও, পুলিশ সংস্কারের সুপারিশ কার্যত উপেক্ষা করা হয়েছে।
"প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে পুলিশ সংস্কার সম্ভব"—এমন বক্তব্য দিয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এই সংস্কার প্রকল্পকে থমকে দেওয়ার একটি কৌশল মাত্র।
পুলিশ সদস্যদের মূল দাবি হলো একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা, যা নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ করতে পারবে। তবে সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে কার্যকর কোনো সুপারিশ না করায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার পুলিশের এই সংস্কার দাবির প্রতি কতটা গুরুত্ব দেয়।
সম্পাদক: উম্মে হাবিবা
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫