প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ৪:৩০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৬, ২০২৫, ৩:২১ অপরাহ্ণ
আশা নিরাশার দোলায় বিএনপি। কৌশলের খেলায় পেরে উঠবে কি?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একদিকে যেমন বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধী হাওয়া বইছে, তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝেও বিভ্রান্তি ও সন্দেহের বাতাস দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, বিএনপি মনে করেছিল যে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর স্বাভাবিকভাবেই তারা ক্ষমতায় ফিরে আসবে। এটি ছিল তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা, যা গত ১৫-১৬ বছর ধরে তাদের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
বিএনপি সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সময় আন্দোলনে ইন্ধন জুগিয়েছে। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় তারা গোপনে ভূমিকা রেখেছে। ৫ আগস্টের আগেও আন্দোলনের পেছনে বিএনপির ভূমিকা ছিল বলে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে। বিএনপির নেতারা লন্ডন থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কর্মীদের উজ্জীবিত করেছেন এবং ছাত্রদের সামনে রেখে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। ৭ আগস্ট বিএনপি বিজয় সমাবেশ করেছে, যেখানে লন্ডন থেকে তাদের নেতা জনগণকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছেন। অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যেই তারা ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।
কিন্তু ৮ আগস্টের পর থেকে তাদের সেই উচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এখন সাত মাস পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগবিহীন রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজের একটি অংশ ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)’ গঠন করেছে। তারা বিএনপির সঙ্গে থেকে রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও তারা বলছে, গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসাথে চাই এবং নতুন প্রজাতন্ত্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে বাস্তবে তারা কী করতে চায়, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিএনপি নেতারা বুঝতে পারছেন না যে, ভবিষ্যতে NCP নেতারা নিজেরাই ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করবে, নাকি বিএনপিকে সমর্থন দেবে। তাই বিএনপি চাচ্ছে ছাত্রদের ভুলিয়ে ভালিয়ে কোনো রকম নির্বাচনটা আদায় করতে পারলেই হয়। অর্থাৎ নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ ক্লিয়ার হবে।
ছাত্রদের বা ড. ইউনুসকে না বিগড়িয়ে সরকারের সংস্কারে সায় দিয়ে দিয়ে নির্বাচনের সঠিক তারিখটা আদায় করা—এটাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। এই কারণেই কিছু নেতারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিলেও, পরে আবার কিছু নেতারা ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে, ইফতার করছে। অর্থাৎ সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না—এই নীতি অবলম্বন করছে।
অন্যদিকে ছাত্ররাও বিএনপিকে মুখে মুখে তালগাছ বানিয়ে রেখে তলে তলে নিজেরা সারাদেশে নিজেদের প্রার্থী তৈরি করছে। তারাও বিএনপিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে যত দেরিতে নির্বাচন নেয়া যায়, সেজন্য একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে।
অর্থাৎ দুই দলই কৌশলের খেলায় নেমেছে।
আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনে দুই দলের কৌশলের খেলায় কে হারে, কে জিতে—তাই দেখার বিষয়।
সম্পাদক: উম্মে হাবিবা
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫